রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:০৯ পূর্বাহ্ন

ফুচকা বিক্রি করেছেন, আজ আইপিএলের নায়ক

ফুচকা বিক্রি করেছেন, আজ আইপিএলের নায়ক

স্বদেশ ডেস্ক:

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) গতকাল রোববার ৬২ বলে ১২৪ রানের ইনিংস খেলে নায়ক বনে যান যশস্বী জয়সাওয়াল। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে তার সেঞ্চুরি অবশ্য রাজস্থান রয়্যালসকে জেতাতে পারেনি। টিম ডেভিডের তিন ছক্কায় রোহিত শর্মার দলই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। তবে ম্যাচ সেরা অবশ্য তরুণ এই ওপেনারের হাতেই ওঠে।

যদিও ক্রিকেটে জয়সাওয়ালের সুযোগ পাওয়াটাই ছিল রূপকথার মতো। উত্তরপ্রদেশের ভাদোহি জেলার সুরিয়া এলাকায় জন্ম তার। ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, তার বাবা ভূপেন্দ্র ছিলেন রং বিক্রেতা। আর মা কাঞ্চন বেসরকারি স্কুলে পড়াতেন।

পরিবারে চার সন্তানের লালন-পালনের পর জয়সাওয়ালকে ক্রিকেটার বানানোর খরচ জোগানো অসম্ভব হয়ে উঠছিল বাবা-মার। কিন্তু মুম্বাইয়ে নিয়ে আসার জন্য বাবাকে বুঝিয়েছিলেন তিনি। যেখানে দশ বছর বয়সে চলে আসেন মুম্বাইয়ে। কেননা স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার হওয়ার।

ক্রিকেট খেলে তো শুরুতে পেট চালাতে পারছিলেন না জয়সাওয়াল। যার কারণে প্রথমে দোকানে কাজ নেন। কিন্তু মাথায় তখন শুধুই ক্রিকেট। প্রতি দিন  প্রচুর অনুশীলন। অনুশীলনের পেছনে এতটাই সময় দিতেন যে, দোকানের জন্য আর সময় ছিল না। ফলে কাজ চলে যায় কিছু দিনের মধ্যেই।

অবশ্য অনুশীলন বন্ধ থাকেনি। কিন্তু স্বপ্নপূরণের জন্য টাকাও তো দরকার। মুম্বাইয়ের আদাজ ময়দানে ফুচকা বেচতে শুরু করেন। তখন আর কাজের বাঁধাধরা নিয়ম, সময় নেই। জীবনের স্বাধীনতা পাওয়ার আনন্দে ক্রিকেটের সাধনা বেড়ে যায় জয়সাওয়ালের। ময়দানেরই এক মাঠ কর্মীর সঙ্গে পরিচয় হয়ে যায়। তার সাহায্যেই তাঁবুতে রাত কাটাতেন। সেখানে বিদ্যুৎ ছিল না, খাওয়ার পানি ছিল না। শুধু ছিল ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন।

পরে জয়সাওয়াল হঠাৎই নজরে পড়ে যান জ্বালা সিংহের। ঘুরে যায় জীবনের গতিপথ। তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন জ্বালা। হবু স্ত্রী বন্দনাকে বলে দেন, এই ছেলেটাকে কিন্তু নিজের ছেলের মতোই গড়ে তুলতে হবে। বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন। সেই শুরু। আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। জ্বালাকে জয়সাওয়াল শুরুতে শুধু বলেছিলেন, ‘স্যার, আমি আর কোনো কিছু পারি না। শুধু ক্রিকেট খেলতে পারি। আমি আপনার সব কাজ করে দেব। যা বলবেন সব করব। ঘর পরিষ্কার করব, জুতা পালিশও করে দেব। শুধু ক্রিকেট খেলতে দেবেন।’

জানা যায়, মুম্বাইয়ের সান্তাক্রুজে নিজের অ্যাকাডেমি রয়েছে জ্বালার। সেখানেই এর পর থেকে সাধনা শুরু হয় জয়সাওয়ালের। তার চেষ্টা বিফলে যায়নি। ২০১৫ সালে স্কুল ক্রিকেটে তার ৩১৯ রানের ইনিংস এবং ৯৯ রান দিয়ে ১৩ উইকেট জায়গা করে নেয় লিমকা বুক অব রেকর্ডসে। সুযোগ চলে আসে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৬ দলে।

ধীরে ধীরে জায়গা করে নেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলেও। এরপর ২০২০ সালে যুব বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটার। ১৩৩ গড়ে টুর্নামেন্টে ৪০০ রান। সেমিফাইনালে ম্যাচ-জেতানো সেঞ্চুরি ও চারটি হাফ-সেঞ্চুরির অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতা। এই ধারাবাহিকতাই ধরে রাখতে চান যশস্বী। ম্যাচের সেরার পুরস্কার নিয়ে তাই মহেন্দ্র সিং ধোনির দর্শনে বলে যান, ‘শুধু কঠোর পরিশ্রম করে যে তে চাই। পদ্ধতিটাই আসল। ফল আপনিই আসবে।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877